Header Ads

Humayun Ahmed: ছোট গল্প -একটি নীল বোতাম




একটি নীল বােতাম


বারান্দায় এশার বাবা বসেছিলেন। হাঁটু পর্যন্ত তােলা লুঙি, গায়ে নীল রঙের গেঞ্জি। এই জিনিস কোথায় পাওয়া যায় কে জানে? কী সুন্দর মানিয়েছে তাঁকে। ভদ্রলােকের গায়ের রঙ ধবধবে শাদা। আকাশি রঙের গেঞ্জিতে তাঁর গায়ের রঙ ফুটে বেরুচ্ছে। সব মিলিয়ে সুখী-সুখী একটা ছবি। নীল রঙটাই বােধহয় সুখের। কিংবা কে জানে ভদ্রলােকের চেহারাটাই বােধহয় সুখী-সুখী। কালাে রঙের গেঞ্জিতেও তাঁকে হয়তাে সুখী দেখাবে।
তিনি আমাকে দেখতে পান নি। আমি ইচ্ছা করেই গেটে একটু শব্দ করলাম । তিনি আমাকে দেখলেন। সুন্দর করে হাসলেন। ভরাট গলায় বললেন, আরে রঞ্জু, তুমি? কী খবর? ভালাে আছ?
জি ভালাে। গরম কী রকম পড়ছে বল দেখি? খুব গরম। আমার তাে ইচ্ছা করছে চৌবাচ্চায় গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে বসে থাকি।
তিনি তাঁর পাশের চেয়ারে আমাকে বসতে ইঙ্গিত করলেন ! হাসি-হাসি মুখে বললেন, বসো। তােমার কাছ থেকে দেশের খবরাখবর কিছু শুনি।
আমার কাছে কোনাে খবরাখবর নেই চাচা।
না থাকলে বানিয়ে-বানিয়ে বল । বর্তমানে চালু গুজব কী?
আমি বসলাম তার পাশে। এশার বাবার সঙ্গে কথা বলতে আমার ভালাে লাগে। মাঝে-মাঝে এ-বাড়িতে এসে শুনি এশা নেই— মামার বাড়ি গেছে। রাতে ফিরবে না । তার মামার বাড়ি ধানমণ্ডিতে। প্রায়ই সে সেখানে যায়। আমার খানিকটা মন-খারাপ হয়। কিন্তু এশার বাবার সঙ্গে কথা বললে আমার মন-খারাপ ভাবটা কেটে যায়।
এই যে এখন বসলাম উনার পাশে এখন যদি শুনি এশা বাসায় নেই, মামার বাড়ি গিয়েছে— আমার খুব খারাপ লাগবে না।
তারপর রঞ্জু নতুন কোনাে গুজবের কথা তাহলে জানাে না?
জি না ।
বল কী তুমি? শহর ভর্তি গুজব। আমি তাে ঘরে বসে কত কী শুনি। চা খাবে?
জি না।
খাও এক কাপ। তােমার সঙ্গে আমিও খাব। তুমি আরাম করে বসাে । আমি চায়ের কথা বলে আসি ।
আপনাকে বলতে হবে না, আমি বলে আসছি। এশা কি বাসায় নেই?
 আছে । বাসাতেই আছে।
বলেই তিনি চায়ের কথা বলতে উঠে গেলেন। কী চমকার তার এই ভদ্রতা। আমি কে? কেউ না। অতি সামান্য একজন । একটা এ্যাড ফার্মে কাজ করি। অল্প যে ক'টা টাকা পাই তার প্রতিটির হিসাব আমার আছে। আর এঁরা? আমার ধারণা, এদের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা দারােয়ান আমার চেয়ে বেশি টাকা পায়। নিতান্ত ভাগ্যক্রমে এঁদের এক আত্মীয়ের সঙ্গে এ-বাড়িতে এসেছিলাম। প্রথমদিনেই এশার কী সহজ সুন্দর ব্যবহার যেন সে অনেকদিন থেকেই আমাকে চেনে। সেদিন কেমন হাসিমুখে বলল, আপনি তাে বেশ লম্বা। আসুন একটা কাজ করে দিন । চেয়ারে দাঁড়ান, দাঁড়িয়ে খুব উচুতে একটা পেরেক লাগিয়ে দিন। আমি বললাম, এত উঁচুতে পেরেক দিয়ে কী করবেন?
আজ বলব না। আরেকদিন এসে দেখে যাবেন।
দ্বিতীয়বার এ বাড়িতে আসার কী চমৎকার অজুহাত তৈরি হল। অথচ অজুহাতের কোনাে প্রয়ােজন ছিল না। এদের বাড়ি দুয়ারখোলা বাড়ি। যে-কেউ যে-কোনাে সময় আসতে পারে। কোনাে বাধা নেই। অথচ মনে আছে দ্বিতীয়বার কত ভয়ে-ভয়ে এসেছি। গেট খুলে ভেতরে ঢোকার সাহস হয় নি। যদি আমাকে কেউ চিনতে না পারে। যদি এশা বিস্মিত হয়ে বলে, আপনি কাকে চান?
 সে রকম কিছুই হল না। এশার বাবা আমাকে দেখে হাসিমুখে বললেন, কী ব্যাপার রঞ্জু, গেটের পাশে দাঁড়িয়ে আছ কেন? আস, ভেতরে আস।
আমি খানিকটা বিব্রত ভঙ্গিতেই ঢুকলাম। তিনি হাসিমুখে বললেন, দেশের খবরা-খবর বল। নতুন কী গুজব শুনলে?
এশা বােধহয় বাইরে যাচ্ছিল। আমাকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে বলল, বেছেবেছে আজকের দিনটিতেই আপনি এলেন? এখন বেরুচ্ছি। আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারব না। চট করে আসুন তাে, পেরেকটা কী কাজে লাগছে দেখে যান।
আমি ইতস্তত করছি। এশার বাবার সামনে থেকে উঠে যাব, উনি কী মনে করেন কে জানে। উনি কিছুই মনে করলেন না। সুখী-সুখী গলায় বললেন, যাও দেখে আস। জিনিসটা ইন্টারেস্টিং।
পেরেক থেকে হলুদ দড়ির মতাে একটা জিনিস মেঝে পর্যন্ত নেমে এসেছে। এশা বাতি নিভিয়ে একটা সুইচ টিপতেই অদ্ভুত ব্যাপার হল। হলুদ দড়ি আলােয় ঝিকমিক করতে লাগল। সেই আলাে স্থির নয়। যেন পড়িয়ে-গড়িয়ে নিচে নামছে। আলাের ঝরনা।
অপূর্ব!
কী, অবাক হয়েছেন তাে?
 হুঁ, হয়েছি।
এ অদ্ভুত জিনিস এর আগে কখনাে দেখছেন?
জি না।
আমার বড়বােন পাঠিয়েছেন। নেদারল্যান্ড থাকেন যিনি, তিনি। এখন যান। বসে বসে বাবার গল্প শুনুন। বাবা কি আপনাকে তার কচ্ছপের গল্পটা বলেছে?
জি না।
তাহলে হয়তাে আজ বলবে। বাবার গল্প বলার একটা প্যাটার্ন আছে। কোনটির পর কোন্ গল্প আসবে আমি জানি।
এশা হাসল। কী সুন্দর হাসি। আমি দীর্ঘনিশ্বাস ফেললাম— না জানি কোন্ ভাগ্যবান পুরুষ এই মেয়েটিকে সারাজীবন তার পাশে পাবে।
 এশার বাবা সেদিন কচ্ছপের গল্প বললেন না। পরের বার যেদিন গেলাম সেদিন বললেন। কচ্ছপ কোথায় ডিম পাড়ে জানাে তাে রঞ্জঃ ডাঙায়। সে নিজে থাকে কিন্তু পানিতে।  চলাফেরা, জীবনযাত্রা সবই পানিতে অথচ তার মন পড়ে থাকে তার ডিমের কাছে ডাঙায় । ঠিক না?
জি ঠিক। বুড়াে বয়সে মানুষেরও এই অবস্থা হয়। সে বাস করে পৃথিবীতে কিন্তু তার মন পড়ে থাকে পরকালে। আমার হয়েছে এই দশা।

এই পরিবারটির সঙ্গে পরিচয় হবার পর আমার মধ্যে বড় ধরনের কিছু  পরিবর্তন হল । আগে বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতে চমৎকার লাগত। এখন আর লাগে না। একসময় মেয়েদের নিয়ে কেউ কোনাে কুৎসিত কথা বললে বেশ মজা পেতাম। এখন ভয়ংকর রাগ লাগে। মনে হয় এই কুৎসিত কথাটি কোনাে-না-কোনাে ভাবে এশাকে স্পর্শ করছে।
 যে খুপরি ঘরটায় থাকি সেই ঘর আমার আর এখুন ভালাে লাগে না। দম বন্ধ হয়ে আসে। নোনাধরা বিশ্রী দেয়াল। একটি ছােট জানালা যা দিয়ে আলাে-বাতাস আসে না, রাতের বেলা শুধু মশা ঢুকে। চৈত্র মাসের গরমে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকি। নানান রকম কল্পনা মাথায় আসে। কল্পনায় আমার এই ঘর হয়ে যায় পদ্মানদীর নৌকায় একটা ঘর। জানালা খুললেই নদী দেখা যায়। সেই নদীতে জোছনা হয়েছে। চাঁদের আলাে ভেঙে-ভেঙে পড়ছে। ঘরের দরজায় টোকা পড়ে। আমি জানি কে টোকা দিচ্ছে। তবু কাঁপা গলায় বলি, কে? এশা বলে, কে আবার? আমি ।
 এরকম চমৎকার রাতে আপনি ঘরটর বন্ধ করে বসে আছেন। পাগল নাকি? আসুন তাে।
কোথায় যাব? কোথায় আবার, নৌকার ছাদে বসে থাকব।
আমরা নৌকার ছাদে গিয়ে বসি। মাঝি নৌকা ছেড়ে দেয়। এশা গুনগুন করে গায়ঃ যদি আমায় পড়ে তাহার মনে, বসন্তের এই মাতাল সমীরণে। আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে।
 সবই খুব সুন্দর সুখের কল্পনা। তবু এক-এক রাতে কষ্টে চোখে জল আসে । সারারাত জেগে বসে থাকি। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ভাবি, আমার এই জীবনটা আমি কি কিছুতেই বদলাতে পারি না?
বন্ধুবান্ধব সবাইকে অবাক করে এক সন্ধ্যায় জগন্নাথ কলেজের নাইট সেকশনের এমএ. ক্লাসে ভর্তি হয়ে যাই। ধার-টার করে আমার ঘরের জন্যে নতুন পর্দা, বিছানার নতুন চাদর, নেটের মশারি কিনে ফেলি । অনেক ঘােরাঘুরি করে একটা ফুলদানি কিনি। একশ টাকা লেগে যায় ফুলদানিতে। তা লাগুক, তবু তাে একটা সুন্দর জিনিস। একগুচ্ছ রজনীগন্ধা যখন এখানে রাখব তখন হয়তাে এই ঘরের চেহারা পাল্টে যাবে। আমার এক আর্টিস্ট বন্ধুর কাছ থেকে একদিন প্রায় জোর করে জলরঙা একটা ছবিও নিয়ে আসি। নোনাধরা দেয়ালে সেই ছবি মানায়
। নিজেই চুন এনে দেয়ালে চুনকাম করি । চুন দেয়ালে আটকায় না, ঝরে-ঝরে পড়ে। তবু আমার ঘর দেখে বন্ধুরা চোখ কপালে তুলে।
করছিস কী তুই? ইন্দ্রপুরী বানিয়ে ফেলেছিস দেখি। আবার দেখি খুশবুও আসছে। বিছানায় আতর ঢেলে দিয়েছিস নাকি? মাই গড। মেয়েমানুষ ছাড়া এই ঘর মানায় না। এক কাজ কর একশ টাকা দিয়ে একটা মেয়েমানুষ এক রাতের জন্য নিয়ে আয়। ফুর্তি কর। আমরা পর্দার ফাক দিয়ে দেখি ।
রাগে আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়। কিছু বলি না। কী হবে বলে। আমার বন্ধুরা গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দেয়। সিগারেটের টুকরা দিয়ে মেঝে প্রায় ঢেকে ফেলে। একজন আমার নতুন কেনা বিছানায় চায়ের কাপ উল্টে দিয়ে বলে, যা শালা, চাদে কলঙ্ক লেগে গেল।

আমি কিছু বলি না।দাতে দাত চেপে থাকি। আর মনে মনে ভাবি —এই মূর্খদের সঙ্গে কী করে এতদিন কাটিয়েছি। কী করে এদের সহ্য করেছি?
ইরফান বলল, প্রেম করেছিস কিনা বল। তাের হাবভাব যেন কেমন রঙ্গিলা ।
আমি জবাব দেই না। ইরফান পান-খাওয়া লাল দাত বের করে হাসতে-হাসতে বলে, জিনিস কেমন বল । টিপেটুপে দেখেছিস তো?
সবাই হাে হাে করে হাসে। কোন্ অন্ধকার নরকে এরা পড়ে আছে? এদের কী কোনােদিন মুক্তি ঘটবে না? আমার ইচ্ছা করে এশাকে একদিন ওদের সামনে উপস্থিত করি। সেটা নিশ্চয়ই খুব অসম্ভব নয়। বললেই সে আসবে। তবে আমার বলতে সাহস করে না।
 প্রথম যেদিন তাকে তুমি বললাম কী প্রচণ্ড ভয়ে-ভয়েই না বললাম। সে গােলাপগাছের ডাল ছেটে দিচ্ছিল। আমি পাশে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ কী হল, নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম— কাঁচিটা আমার হাতে দাও, আমি হেঁটে দি। বলেই মনে হল—এ কী করলাম আমি? আমার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। অমার মনে হল সে এবার চোখে চোখে তাকিয়ে শীতল গলায় বলবে, আমাকে তুমি করে বলবেন না। এত ঘনিষ্ঠতা তাে আপনার সঙ্গে আমার নেই।
এশা সে-রকম কিছুই বলল না। কাঁচি আমার হাতে দিয়ে বলল, তিন ইঞ্চি করে কাটবেন। এর বেশি না। আর আপনি কি চা খাবেন?
হা খাব।
চা নিয়ে আসছি। শুনুন, এরকম কচকচ করে কাটবেন না, ওরা ব্যথা পায়। গাছেরও জীবন আছে। জগদীশ চন্দ্র বসুর কথা।
এশা ঘরে ঢুকে গেল। চৈত্র মাসের বিকেলে আমি গােলাপ ছাঁটতে লাগলাম। আমার ত্রিশ বছর জীবনের সেটা ছিল শ্রেষ্ঠতম দিন। বিকালটাই যেন কেমন অন্যরকম হয়ে গেল। শেষ বিকেলের রােদকে মনে হল লক্ষ-লক্ষ গােলাপ, বাতাসকী মধুর ।
এশার বাবা যখন বাইরে এসে বললেন— তারপর রঞ্জু দেশের খবর কী বল? নতুন কী গুজব শুনলে?—কী যে ভালো লাগল সেই কথাগুলি! মনে হল এরকম সুন্দর কথা এর আগে আমাকে কেউ বলে নি।
গােলাপের ডাল ছাটছ মনে হচ্ছে।
জি চাচা।
এর একটা ফিলসফিক আফসেট আছে। সেটা লক্ষ্য করেছ? ফুল ফোটাবার জন্যে গাছকে কষ্ট দিতে হচ্ছে। হা-হা-হা ।
তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়ে আমিও হাসলাম। এশা চায়ের ট্রে নিয়ে ঢুকতে-ঢুকতে বলল, এত হাসাহাসি হচ্ছে কেন? আমি যােগ দিতে পারি?
 ওদের বাড়ি থেকে ফিরলাম সন্ধ্যার পর। এশা গেট পর্যন্ত এল। হাসিমুখে বলল, আবার আসবেন।
এই কথাটি কি পৃথিবীর মধুরতম কথার একটি নয়? আমি আবার আসতে পারি এ বাড়িতে। যতবার ইচ্ছা আসতে পারি। আমাকে কোনাে অজুহাত তৈরি করতে হবে না। তবুও ছােটখাটো কিছু অজুহাত আমি তৈরি করেই রাখি । যেমন একবার আমার একটা হ্যান্ডব্যাগ ফেলে এলাম যাতে পরদিন গিয়ে বলতে পারি, জরুরি কিছু কাগজপত্র ছিল। যাক পাওয়া গেল। সবচে বেশি যা করি তা হচ্ছে—-গল্পের বই নিয়ে আসি। তারপর সেই বই ফেরত দিতে যাই।
গল্পের বই আমি পড়ি না। ভালাে লাগে না। কোনােকালেও ভালাে লাগে নি। তবু রাতে শুয়ে-শুয়ে বইয়ের ঘ্রাণ নেই, পাতা ওল্টাই। এশার স্পর্শ এই বইগুলির পাতায়-পাতায় লেগে আছে ভাবতেই আমার রােমাঞ্চ বােধ হয়। গা শিরশির করে। গভীর আনন্দে চোখ ভিজে উঠে। বই ওল্টাতে-ওল্টাতে একরাতে অদ্ভুত এক কাণ্ড হল। টুক করে বইয়ের ভেতর থেকে কী যেন পড়ল। তাকিয়ে দেখি ছােট একটা নীল রঙের বােতাম। যেন একটা নীল অপরাজিতা। নাকের কাছে নিয়ে দেখি সত্যি গন্ধ আসছে। আমি গভীর মমতায় বােতামটা বালিশের নিচে রেখে দিলাম। সারারাত ঘুম হল না। কেবলি মনে হল একদিন-না-একদিন এশা আসবে এ বাড়িতে। আমি তাকে বলব, তুমি যে ফুলটি আমাকে দিয়েছিলে সেটা এখনাে ভালাে আছে। কী সুন্দর গন্ধ । সে অবাক হয়ে বলবে, আমি আবার ফুল দিলাম কবে
এর মধ্যে ভুলে গেলে? একটা নীল ফুল দিয়েছিলে না? বলেন কী! নীল ফুল আমি কোথায় পাব?
আমি বালিশ সরিয়ে বােতামটা বের করে আনব। এশা বিস্মিত হয়ে বলবে— এটা বুঝি আপনার নীল ফুল? আমি বলব, বিশ্বাস না হলে গন্ধ শুকে দেখ।




এশার বাবা নিজেই দুকাপ চা নিয়ে ঢুকলেন। আমার বড় লজ্জা লাগল । আমি বললাম, ছিঃ ছিঃ আপনি কেন?
 তিনি হেসে বললেন, তাতে কী হয়েছে। খাও, চা খাও। চিনি হয়েছে কিনা বল।
হয়েছে।
গুড।  চিনি আমি নিজেই দিয়ে এনেছি। কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই ব্যস্ত।
 কোনাে উৎসব নাকি?
উৎসব কিছু না। মেয়েলি ব্যাপার। এশার বিয়ে ঠিক হল। ওরা দিন পাকা করতে আসবে। রাত আটটায় আসবে। এখনাে তিন ঘণ্টা দেরি অথচ ভাব দেখে মনে হচ্ছে ...
আমি নিঃশব্দে চায়ে চুমুক দিতে লাগলাম। এশার বাবা বললেন, ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ সাহেবের ছেলে। তুমি চিনবে নিশ্চয়ই। ইমতিয়াজ চৌধুরী, জিয়ার আমলে হেলথ মিনিস্টার ছিলেন। ছেলেটা খুব ভালাে পেয়েছি। জার্মানি থেকে পিএইচ. ডি. করেছে ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ। এখন দেশে কী সব ইন্ডাস্ট্রি দেবে। রঙ তৈরি করবে। আমি ঠিক বুঝিও না।
চা শেষ করবার পরও আমি খানিকক্ষণ বসে রইলাম। যাবার আগে এশা বেরিয়ে এল। কী চমৎকার করেই না আজ তাকে সাজিয়েছে। তাকিয়ে থাকতে কষ্ট হয়। এশা হাসিমুখে বলল, বেছে-বেছে আপনি ঝামেলার দিনগুলিতে আসেন কেন বলুন তাে?
আমি ফিরে যাচ্ছি আমার খুপরি ঘরে। অন্যসব রাতের মতাে আজ রাতেও হয়তাে ঘুম হবে না। বালিশের নিচ থেকে নীল বােতাম বের করে আজো নিশ্চয়ই দেখব। এই পরিবারটির কাছ থেকে একটা নীল বােতামের বেশি পাওয়ার যােগ্যতা আমার ছিল না। এই সহজ সত্যটি আজ রাতেও আমার মাথায় ঢুকবে না। আজ রাতেও বােতামটিকে মনে হবে একটি অপরাজিতা ফুল







★★★★★★__________★★★★★★

1 comment:

  1. নতুন নতুন Golpo পড়তে ভিজিট করুন
    www.valobasargolpo2.xyz

    ReplyDelete